প্রকাশিত: Thu, Mar 23, 2023 10:21 AM
আপডেট: Wed, Jun 25, 2025 9:32 PM

পরাশক্তির নয়া মেরুকরণে এককেন্দ্রিক বিশ^ব্যবস্থার দিন কি শেষ?

মঞ্জুরে খোদা টরিক : বিশে^র মোট ১৩টি রাষ্ট্র/অঞ্চল তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদীকে সমর্থন করতো। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুসারে, সেই ১৩টি দেশ হচ্ছে, হন্ডুরাস,  গুয়াতেমালা, হাইতি, প্যারাগুয়ে, এস্বাতিনি, বেলিজ, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, নাউরু (জাতিসংঘের সদস্য নয়) ভ্যাটিকান সিটি প্রধানত। এই ১৩টি রাষ্ট্রের প্রধান দেশ হন্ডুরাস সম্প্রতি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে চীনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে হন্ডুরাসের নবনির্বাচিত বামপন্থী প্রেসিডেন্ট জিয়ামারা কাস্ত্রো এই ঘোষণা দিয়েছেন। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথা আরও খারাপ অবস্থা। তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতা সমর্থন করে এখন যে ১২টি দেশ তাদের সর্বসাকুল্যে জনস্যংখ্যা কতো জানেন? মাত্র ৩৯ লাখ। বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ০.৪৯ শতাংশ। তার মানে বিশে^র ৯৯.৫১ শতাংশ মানুষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে যে তাইওয়ান হচ্ছে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের একটি প্রদেশ। আমেরিকা এই ৩৯ লাখ মানুষের তাইওয়ান নিয়ে মাতামাতি করছে। যাদের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কোনো গুরুত্ব নেই। 

চীন ইতোমধ্যে সৌদি-আরব ও ইরানের বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। সৌদ বাদশা ইতোমধ্যে ইরানের রাষ্ট্রপতিকে তার দেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তুরষ্ক-মিশরের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ইরান-সিরিয়ায় যোগাযোগ তৈরিতে চীন-রাশিয়া ভূমিকা রাখছে। আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্যিক যোগাযোগ তৈরি করেছে। চীন তার কূটনীতিকে এভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই চীনের প্রেসিডেন্ট সি রাশিয়ায় সফরে গেছেন। এর মাধ্যমে চীন-রাশিয়ার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ ও জোড়দার করবে। সি, পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্ক্রির সঙ্গেও কথা বলবেন। চীনের কূটনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে/সম্পর্কে একটা আলাপ ও শান্তির পরিবেশ তৈরি হতেও পারে।

তার চেয়ে বড় বিষয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাধ্যমে ইতোমধ্যে বিশ্ব রাজনীতি ও সামরিক শক্তির নয়া মেরুকরণ পরিষ্কার হয়েছে। চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ চীন-রাশিয়া বলয়ের দিকে ঝুঁকছে। বিশ্ব পরাশক্তিতে শীতল যুদ্ধের এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বে ব্রিকস (ভারত-ব্রাজিল), ইরান, উত্তর কোরিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশসমূহের মধ্যে নতুন করে বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে। মার্কিনিরাও চুপ করে বসে নেই। তারাও চীন-রাশিয়া বলয়কে ঘিরতে অকাসসহ নানা  সামরিক জোট করছে। যারা মনে করেন আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তি বিশ্বে মাতব্বরী করছে, করুক। তাদের মুখে ছাই দিয়ে অসাম্য বিশ্বব্যবস্থার ভারসাম্যে নতুন বিশ্ব বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। অপ্রিয় হলেও সেটার প্রয়োজন ছিলো। এতে অনেক বিপদ আছে, কিন্তু এককেন্দ্রিক বিশ^ব্যবস্থার বিপরীতে আপাতত এর কোনো বিকল্প নেই। 

বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের কূটনৈতিক সাফল্য ও তৎপরতা মার্কিনিদের খুশি করতে পারেনি। দ্বন্দ্ব ও বিভেদের সাম্রাজ্যবাদী নীতিতে চীন ছাই ঢেলে দিয়েছে। তাদের সাজানো ছক এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে যে। এক এক করে তাদের দর্পের ডানা খসে পড়ছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পতন এভাবেই হয়। একসময় অনেক স্লোগান দিয়েছি, হাত গুটা মার্কিন, ফুরিয়ে গেছে তোদের দিন। বিশ্ব পরাশক্তির নয়া মেরুকরণেÑ তাদের সেই দিন কি সত্যি শেষ হয়ে আসছে? লেখক ও গবেষক